
রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ একটি আলোকিত বিদ্যাপীঠ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। ১৯৬৮ সালে এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়, যার পেছনে ছিল শিক্ষার অভাবে পিছিয়ে পড়া একটি জনপদকে আলোর পথে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন। প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিয়ে পথচলা শুরু হলেও ধীরে ধীরে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কলেজে পরিণত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিনটি শাখায় পাঠদান চালু রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ, যারা সবসময় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষকরা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, নেতৃত্বগুণ, শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেমের মতো মানবিক গুণাবলি অর্জনে অনুপ্রাণিত করে থাকেন। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে রয়েছে প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী, যা শিক্ষাকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। এছাড়া আধুনিক বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি ও মাল্টিমিডিয়া সুবিধাসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীদের আধুনিক জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
বিদ্যালয়টি শুধু শিক্ষায় নয়, সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেও সমানভাবে অগ্রগামী। প্রতি বছর ক্রীড়া, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কুইজ প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা এবং জাতীয় দিবস পালনসহ নানান সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সম্মানজনক স্থান অর্জন করে থাকে, যা প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ও গৌরব বাড়িয়ে তোলে।
শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, পরিচালনা পর্ষদের দিকনির্দেশনা, অভিভাবকদের সহযোগিতা এবং স্থানীয় জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের ফলে বিদ্যালয়টি একটি সুশৃঙ্খল ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। নিয়মিত ক্লাস, অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের ফলোআপ এবং ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। বিদ্যালয়ের সুশৃঙ্খল নিয়মনীতি এবং পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মানসিক প্রশান্তির পরিবেশ, যা পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যালয়টি বিভিন্ন সময় সরকার ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছ থেকে পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশেষ করে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ এবং বিভিন্ন শিক্ষা মেলায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজকের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আদর্শ নির্মাণের কারখানা। এখানে শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও মানবিকতাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানটি আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার মাধ্যমে জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।